জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘এ নির্বাচনটা সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। তাদের ইচ্ছামতো ফল প্রকাশ হয়েছে। জনগণের ভোটের প্রত্যাশা এখানে আসেনি। আরেক জায়গায় তারা আগেই ফল রেডি করে রেখেছে বলে এমন খবর পাচ্ছি। এখানে জনগণ যে ভোট দিয়েছে সেটার প্রতিফলন হয়নি।’
জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনটিকে সঠিক নির্বাচন বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানাভাবে আমাদের প্রার্থীদের হয়রানি করা হয়েছে। অধিকাংশ স্থানে এজেন্টদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যালট সিল করে করে দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে মোটামুটি এটা বোঝা গেছে যে সরকার যেখানে সঠিক নির্বাচন করতে চেয়েছেন সেখানে তা-ই হয়েছে। আবার যেখানে কোনো পার্টিকুলার লোককে জিতিয়ে আনতে চেয়েছেন সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে। কতগুলো সরকার তার দলের লোককে কোনো রকম বাধা দেয়নি, তারা নির্বিঘ্নে সেন্টার দখল করেছে। সেখানে প্রশাসন, পুলিশ ও প্রিজাইডিং অফিসারসহ সবাই সহযোগিতা করেছে এবং তারা সিল মেরে তাদের পছন্দের দলীয় লোককে পাস করিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে দেশের নির্বাচন ভালো হয়নি। আমরা এটি আশঙ্কা করেছিলাম। সরকার যেখানে চেয়েছে নির্বাচন নিরপেক্ষ করেছে, আবার যেখানে চেয়েছে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়েছে। তাই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ কারণে নির্বাচনে কেউ আসতেও চায়নি। আন্তর্জাতিকভাবে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা তা আমি বলতে পারছি না। তবে এ নির্বাচন নিয়ে আমার মূল্যায়নে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার কথা।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আমরা এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি না। কারণ এটি করার মতো আমাদের অবস্থা নেই। নির্বাচনে অংশ নেয়া ভুল হয়েছি কি সঠিক হয়েছে তা এখনই মূল্যায়ন করা যাবে না। সামনের দিনগুলোয় দেখে তারপর মূল্যায়ন করা হবে।’
হয়রানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ প্রশাসন, অস্ত্র-পেশিশক্তি ও অর্থের প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা সেই কথা রাখেনি। নির্বাচনের রাত থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের হয়রানি-হামলা করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন ১০টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে সব ভোট কেন্দ্র দখল করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এজেন্টকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে নৌকায় সিল মেরেছে। এক্ষেত্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন নীরব ছিল। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।’
সংসদে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সংসদে যাব না এমন সিদ্ধান্ত নিইনি। নির্বাচন বর্জন করলে আমাদের দলের সমস্যা সৃষ্টি হতো, দলীয় রাজনীতি রক্ষায় আঘাত আসতে পারে এমনটি পরিস্থিতি ছিল। তাই তাদের বিশ্বাস করে নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচনে বিশ্বাস কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলাপ-আলোচনায় আসতে হয়। এছাড়া অন্য প্রক্রিয়া হলো যুদ্ধ করা, আমরা তো যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান করতে পারব না। বিশ্বাস করে এসেছি কিন্তু তারা বিশ্বাস রক্ষা করেনি। তাই আগামীতে তাদের অন্য কেউ বিশ্বাস করবে না। তাদের গ্রহণযোগ্যতার বিপক্ষে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে জাতীয় পার্টি যেখানে ছিল সেখানেই রয়েছে। আমাদের ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দুর্বল করার চেষ্টা করবে, ধ্বংস করতে চাইবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিন্তু যেভাবে আমাদের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে সেই প্রক্রিয়া সঠিক হচ্ছে না। দেশবাসী ভবিষ্যতে আমাদের মূল্যায়ন করবে।’
জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা আশানুরূপ ফল পাইনি। সরকার মিডিয়ার মাধ্যমে বারবার প্রচার করেছে আমাদের আসন ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র শক্তিশালী প্রার্থীকে রেখে দেয়া হয়েছে। তাদের দল বহিষ্কার করেনি ও দলীয় লোকজন ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। সবার ধারণা আমরা আওয়ামী লীগের বি টিম হয়ে কাজ করছি। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এটি প্রচার করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।’
এ সময় তিনি জাপার প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি ঘেরাও করে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।