বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ ছাত্র রাজনীতি চলবে-মর্মে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ছাত্রলীগ নেতার করা রিটের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি মো: খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯১৯ সালে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটি স্থগিত করে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে রিট করেন বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি। রিটে শিক্ষা সচিব, বুয়েটের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করেন। ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলতে আর কোনো বাঁধা নেই।
উল্লেখ, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জোরালো দাবি ওঠে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত প্রকাশে সক্রিয় আবরারকে শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। সহপাঠী হত্যার প্রতিবাদে টানা আন্দোলন শুরু করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সব ধরণের ক্রিয়াশীল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় বুয়েটে।
কিন্তু ওই ঘটনার চার বছর না যেতেই বুয়েটে পুনরায় ছাত্র রাজনীতি চালুর তৎপরতা শুরু করে ছাত্রলীগ। এতে সায় আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরও। বুয়েটের ভিসি বলেছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চাইলে আবারও ছাত্র রাজনীতি চালু করা যেতে পারে।
এর আগে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক শুরু হয় গত ২৭ মার্চ রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশকে কেন্দ্র করে। এ ঘটনায় পরদিনই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে রাজনীতির বীজ বপনের চেষ্টা হচ্ছে, এমন অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শত শত শিক্ষার্থী। শুক্রবার থেকে তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ৬ দফা দাবি জানান। এ প্রেক্ষিতে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বুয়েটে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আংশিক দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো: ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।