বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও কারফিউকে ঘিরে গত কয়েক দিন সারা দেশে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। দুদিন ধরে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে পণ্য সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। মাছ-মাংস ও সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে পেঁয়াজ-রসুন ও চালের দাম আগের অবস্থায় ফিরতে আরো কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর অন্যতম কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। পটোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা দুদিন আগেও ছিল ৬০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজিও ৫০ থেকে নেমে এসেছে ৪০ টাকায়। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে, যা ছিল ৫০ টাকা কেজি। এমনকি মরিচের ঝাঁজও কমতে শুরু করেছে, ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এখন। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এর দাম ছিল ৬০ টাকার ওপরে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন অর্থাৎ রোববার কারফিউর সময় বাড়ানোর ঘোষণা আসে। এমন প্রেক্ষাপটে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। সবার মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। মানুষ তখন আতঙ্কে ‘প্যানিক বায়িং’ বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কেনা শুরু করে। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে গত দুদিনে যান চলাচল শুরু হওয়ায় পণ্য সরবরাহ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারেও।
এদিকে সবজির পাশাপাশি ডিম ও মুরগির দামও কমে এসেছে অনেকটা। আন্দোলনের সময় ডিমের হালি ৬০ টাকায় গিয়ে চড়েছিল। কিন্তু গতকাল তা ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা নাসির জানান, মঙ্গলবার থেকে ডিম সরবরাহ আবার ঠিক হয়েছে। তাই দাম আগের জায়গায় নেমে এসেছে।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে প্রধানত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ায় আগের চেয়ে দাম অনেকটা কমে আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রশাসনের অধীনে হয়তো এতটা প্রকট সিন্ডিকেট বজায় রাখতে পারবে না। তাই দাম কমে আসবে। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আগে যারা চাঁদাবাজি করত তারা সিনে নেই। নতুন কেউ যেন আবার পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি শুরু করতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।’
পেঁয়াজ ও রসুনের দাম অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। গতকাল দেশী পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, যা কয়েক দিন আগে ছিল ১১০ টাকা। আর রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। নিত্য এ পণ্য গতকাল বিক্রি হয় ২২০ টাকা কেজি দরে। কয়েক দিন আগেও এর দাম ছিল ২০০ টাকা কেজি।
এদিকে পরিবহন সংকটের কারণে মোটা ও সরু চালের দামও কেজিপ্রতি ২-১ টাকা বেড়েছিল। এখনো সেই দামে বিক্রি হচ্ছে। এজন্য পরিবহনের পাশাপাশি সরবরাহ সংকট ও মিলারদের দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল কারওয়ান বাজারে মোটা চাল বিআর২৮ বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকা কেজি দরে, যা একদিন আগেও ছিল ৫২ টাকা। চিকন বা সরু চাল বিক্রি হয় ৬৬-৬৭ টাকা কেজি দরে, যা ছিল ৬৩-৬৪ টাকা কেজি।